আদর্শ ছাত্র জীবন

লেখক: আব্দুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানী
প্রকাশনী: ওয়াহীদিয়া ইসলামিয়া লাইব্রেরী
কভার: পেপার ব্যাক
আইএসবিএন: 11

মানবজাতি মহান স্রষ্টার অনুপম সৃষ্টি। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য এবং পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন তাঁর নির্দেশিত পথ অনুসরণের মাধ্যমে জীবন গড়ে তোলার জন্য। তিনি নবী-রাসূলদের মাধ্যমে দিয়েছেন শাশ্বত বিধান ও আইন, যা মানবজীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। সেই বিধানের প্রথম নির্দেশ ছিল জ্ঞানার্জন। আল-কুরআনের প্রথম অবতীর্ণ আয়াতই ছিল শিক্ষার ওপর, যেখানে বলা হয়েছে, "তিনিই কলমের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন এবং যা মানুষ জানত না, তা তাঁকে শিখিয়েছেন।"

ইসলামে জ্ঞানার্জনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এটি প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ফরজ করা হয়েছে। এটি মুসলিম উম্মাহর উন্নতি ও অগ্রগতির মূল ভিত্তি। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই ফরজ বিষয়টিকেই অধিকাংশ মুসলিম অবহেলা করছে। বিশেষ করে, অমুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে মুসলমানদের শিক্ষার অবস্থার করুণ চিত্র আরও বেশি প্রকট।

অনেক জায়গায় ইসলামের মৌলিক মূল্যবোধ ও নীতিকে উপেক্ষা করে শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তোলা হয়। সেখানে চাকরি ও প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বর্ণ ও ধর্মের বৈষম্য প্রকট। এই প্রেক্ষাপটে মুসলিমদের শিক্ষার হার অত্যন্ত নিম্নমানের হয়ে থাকে। দরিদ্রতার কারণে অসংখ্য শিশু শিক্ষার মূলধারায় যুক্ত হতে পারে না। অনেক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী আর্থিক সঙ্কটে ঝরে পড়ে। তাদের অমিত সম্ভাবনা বিকশিত হওয়ার আগেই শুকিয়ে যায়। এই মেধার যথাযথ বিকাশের অভাবে সমাজ নিজেই পিছিয়ে পড়ে।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, "আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের গভীর জ্ঞান দান করেন।" এ হাদিসে স্পষ্ট, জ্ঞানার্জন কেবল ব্যক্তিগত নয়; বরং সামগ্রিক উন্নতির একমাত্র উপায়।

তাই আমাদের উচিত, ইসলামিক ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে এমন এক পথ তৈরি করা, যা মেধা ও নৈতিকতার সঠিক বিকাশ ঘটাবে। মুসলিম উম্মাহর প্রতিটি সদস্যের উচিত জ্ঞানার্জনের এই ফরজ দায়িত্ব আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করা। কেননা, জ্ঞানের আলোই পারে একটি জাতিকে দারিদ্র্য, মূর্খতা এবং অবহেলার অন্ধকার থেকে মুক্তি দিতে। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। এটি যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত না হলে উন্নতির স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে।

এখন সময় এসেছে, আমাদের সন্তানদের শিক্ষার সঠিক পরিবেশ প্রদান করার। তাদের নৈতিকতা ও জ্ঞানের সমন্বয়ে গড়ে তুলতে পারলে আমরা এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারব, যা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং মানবজাতির কল্যাণে নিবেদিত হবে।